তিথি
✅"জ্যোতিষশাস্ত্রে প্রতিটি চান্দ্রমাসকে ত্রিশটি দিনে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি চান্দ্রমাসের এই এক একটি দিনকে 'তিথি' বলা হয়। অর্থাৎ, ত্রিশ তিথিতে এক চান্দ্রমাস। এই ত্রিশ তিথিকে আবার দুই পক্ষে বিভক্ত করা হয়। পনেরো চান্দ্রদিবস নিয়ে এক একটি পক্ষ। চান্দ্রমাসের প্রথম তিথি থেকে পঞ্চদশ তিথি পর্যন্ত হচ্ছে ‘শুক্লপক্ষ এবং ‘ষোড়শ' তিথি থেকে ‘ত্রিংশ' তিথি পর্যন্ত হচ্ছে ‘কৃষ্ণপক্ষ'।চান্দ্র বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী প্রতিটি দিনের বিশেষ নাম আছে। "👈
‘শুক্ল' অর্থ ‘শুভ্র'। চান্দ্রমাসের প্রথম পনেরো তিথিতে চাঁদের আকার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে অধিক পরিমাণে আলো ছড়িয়ে পৃথিবীকে আলোকিত (শুভ্র) করে বলে প্রথম পক্ষকে ‘শুক্লপক্ষ' বলা হয়। শুক্লপক্ষের প্রথম দিনকে ‘প্রতিপদ' বলা হয়। তার পরের দিনগুলো যথাক্রমে দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী নামে সংজ্ঞায়িত। শুক্লপক্ষের এই দিনগুলোতে চাঁদের আকার একটু একটু বৃদ্ধি পেয়ে পঞ্চদশ দিনে গিয়ে পূর্ণ রূপ লাভ করে। ‘√পৄ' থেকে ‘পূর্ণ' ও ‘পূর্ণি' যার অর্থ ‘সম্পূর্ণ'। এই ‘পূর্ণি'- র সঙ্গে ‘মা' যুক্ত হয়েই ‘পূর্ণিমা'-র সৃষ্টি। এখানে ‘মা' হচ্ছে ‘চন্দ্রের পরিমাণ'। শুক্লপক্ষের পঞ্চদশ দিনে (রাতে) চাঁদ পূর্ণ পরিমাণে উদিত হয় বলে ওই তিথিকে ‘পূর্ণিমা' বলা হয়। অপরদিকে ষোড়শ দিন থেকে দ্বিতীয় পক্ষ; অর্থাৎ, কৃষ্ণপক্ষ শুরু হয়। ‘কৃষ্ণ' অর্থ ‘কালো'।
ষোড়শ তিথি থেকে চাঁদ ক্ষয় হতে শুরু করে এবং ত্রিংশ তিথিতে গিয়ে একেবারে বিলিন হয়ে যায়। ওই তিথিতে রাতের পৃথিবী কালো আঁধারে ছেয়ে যায় বলে এই পক্ষকে কৃষ্ণপক্ষ বলা হয়। কৃষ্ণপক্ষের প্রথম তিথি থেকে চতুর্দশ তিথির নাম শুক্লপক্ষের অনুরূপ (প্রতিপদ, দ্বিতীয়া ...... চতুর্দশী) হলেও শেষ তিথির নাম হচ্ছে ‘অমাবস্যা'। ‘অমা' অর্থ ‘সঙ্গে', ‘√বস্' মানে ‘বাস করা'; ‘‘অমাবস্যা' হচ্ছে ‘সঙ্গে বাস করা'। পৌরাণিক কাহিনিতে পাওয়া যায়— কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চদশ তিথিতে চাঁদ সূর্যের সঙ্গে একত্রে বাস করে বলে পৃথিবীর আকাশে উদিত হয় না, যার ফলে ওই তিথিতে পৃথিবী কালো আঁধারে ছেয়ে যায়। এবং এই কারণেই কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চদশ তিথিকে ‘অমাবস্যা' বলা হয়।
১. নন্দা: প্রতিপদ, ষষ্ঠী (১ + ৫) আর একাদশী (১ + ৫ + ৫)
২. ভদ্রা: দ্বিতীয়, সপ্তমী (২ + ৫) আর দ্বাদশী (২ + ৫ + ৫)
৩. জয়া: তৃতীয়া, অষ্টমী আর ত্রয়োদশী
৪. রিক্তা: চতুর্থী, নবমী আর চতুর্দশী
৫. পূর্ণা: পঞ্চমী, দশমী, পূর্ণিমা ও অমাবস্যা।
শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ এর মধ্যে শুক্লপক্ষ যেমন অমাবস্যা তিথিতে শুরু হয়ে পূর্ণিমা তিথিতে শেষ হয়, ঠিক তেমনি কৃষ্ণপক্ষও পূর্ণিমা তিথিতে শুরু হয়ে বিপরীতক্রমে অমাবস্যা তিথিতে শেষ হয়। কৃষ্ণপক্ষের ক্ষেত্রেও ঠিক একইভাবে পূর্ণিমার পরের দিন থেকে প্রতিপদ এবং বাকি তিথিগুলিও শুক্লপক্ষের অনুসারেই পরিগণিত হয়। সংস্কৃত ‘কৃষ্ণ’ কথার অর্থ হল কালো বা অন্ধকার। পুরাণে কৃষ্ণের গায়ের রঙের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এই পক্ষের নামকরণ করা হয়েছে কৃষ্ণপক্ষ হিসেবে। প্রতিটি পক্ষের অন্তর্গত তিথিগুলিকে বিশেষ বিশেষ নামে ডাকা হয়ে থাকে, যেমন – শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিকে বলা হয় শুক্লা পঞ্চমী, আবার কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিকে বলা হবে কৃষ্ণা চতুর্দশী ইত্যাদি।
🎊চান্দ্র বর্ষপঞ্জিতে শুক্লপক্ষ, কৃষ্ণপক্ষ বা প্রতিটি তিথি হিন্দুদের কাছে উতসব-অনুষ্ঠান পালনের নির্দেশক হিসেবে কাজ করে বেশি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শুক্লপক্ষকে পবিত্র বলে মনে করেন 😇। ধর্মীয় রীতি-নীতির ক্ষেত্রে প্রতিটি পক্ষের নির্দিষ্ট তিথির বিশেষ তাৎপর্য আছে। বিভিন্ন পূজার তিথি নির্ণয় করা হয় এই পক্ষের হিসেব করেই। কার্তিক মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে দক্ষিণ ভারতে গোবর্ধন পূজা করা হয়, আবার কার্তিক মাসেই শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইদুজ। বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়ার দিনটি "অক্ষয় তৃতীয়া" নামে বাঙালিদের মধ্যে বহুল জনপ্রিয়। ভাদ্র মাসের শুক্লা চতুর্থীতে সারা উত্তর ভারত জুড়ে অনুষ্ঠিত হয় গণেশ পূজা। মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিটি বিদ্যার্থীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই তিথিতেই সরস্বতী পূজা হয়ে থাকে। আশ্বিন মাসে শুক্লপক্ষের পঞ্চমী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন ধরে চলে হিন্দু বাঙালিদের সবথেকে বড়ো পূজা দুর্গাপূজা। এভাবেই কৃষ্ণপক্ষেরও কিছু কিছু তিথি ধর্মীয় দিক থেকে খুবই উল্লেখযোগ্য। যেমন কার্তিক মাসের কৃষ্ণা চতুর্থীতে অবাঙালিরা পালন করেন করবা চৌথ আবার কার্তিক মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে দক্ষিণ ভারতীয়রা পালন করে থাকেন নরক চতুর্দশী উৎসব। শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণা অষ্টমী তিথি পালিত হয় জন্মাষ্টমী হিসেবে। ফলে হিন্দুদের কাছে প্রতি মাসের এই পক্ষ এবং তিথিগুলি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে আনে। চান্দ্র বর্ষপঞ্জি কিংবা এই চান্দ্রমাসের হিসেব বহু প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে, আজও তা বহমান। 😀
শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষের দিন সমূহঃ
শুক্ল পক্ষ | কৃষ্ণ পক্ষ |
১. প্রতিপদ | ১. প্রতিপদ |
২. দ্বিতীয়া | ২. দ্বিতীয়া |
৩. তৃতীয়া | ৩. তৃতীয়া |
৪. চতুর্থী | ৪. চতুর্থী |
৫. পঞ্চমী | ৫. পঞ্চমী |
৬. ষষ্ঠী | ৬. ষষ্ঠী |
৭. সপ্তমী | ৭. সপ্তমী |
৮. অষ্টমী | ৮. অষ্টমী |
৯. নবমী | ৯. নবমী |
১০. দশমী | ১০. দশমী |
১১. একাদশী | ১১. একাদশী |
১২. দ্বাদশী | ১২. দ্বাদশী |
১৩. ত্রয়োদশী | ১৩. ত্রয়োদশী |
১৪. চতুর্দশী | ১৪. চতুর্দশী |
১৫.পূর্ণিমা | ১৫. অমাবস্যা |