শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২

তিথি

তিথি



✅"জ্যোতিষশাস্ত্রে প্রতিটি চান্দ্রমাসকে ত্রিশটি দিনে বিভক্ত করা হয়প্রতিটি চান্দ্রমাসের এই এক একটি দিনকে 'তিথি' বলা হয়অর্থাৎ, ত্রিশ তিথিতে এক চান্দ্রমাসএই ত্রিশ তিথিকে আবার দুই পক্ষে বিভক্ত করা হয়পনেরো চান্দ্রদিবস নিয়ে এক একটি পক্ষ। চান্দ্রমাসের প্রথম তিথি থেকে পঞ্চদশ তিথি পর্যন্ত হচ্ছেশুক্লপক্ষ এবংষোড়শ' তিথি থেকেত্রিংশ' তিথি পর্যন্ত হচ্ছেকৃষ্ণপক্ষ'।চান্দ্র বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী প্রতিটি দিনের বিশেষ নাম আছে। "👈


 ‘শুক্ল' অর্থশুভ্র'। চান্দ্রমাসের প্রথম পনেরো তিথিতে চাঁদের আকার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে অধিক পরিমাণে আলো ছড়িয়ে পৃথিবীকে আলোকিত (শুভ্র) করে বলে প্রথম পক্ষকেশুক্লপক্ষ' বলা হয়শুক্লপক্ষের প্রথম দিনকেপ্রতিপদ' বলা হয়তার পরের দিনগুলো যথাক্রমে দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী নামে সংজ্ঞায়িতশুক্লপক্ষের এই দিনগুলোতে চাঁদের আকার একটু একটু বৃদ্ধি পেয়ে পঞ্চদশ দিনে গিয়ে পূর্ণ রূপ লাভ করে‘√পৄ' থেকেপূর্ণ' ও ‘পূর্ণি' যার অর্থসম্পূর্ণ'। এইপূর্ণি'- র সঙ্গেমা' যুক্ত হয়েইপূর্ণিমা'-র সৃষ্টিএখানেমা' হচ্ছেচন্দ্রের পরিমাণ'শুক্লপক্ষের পঞ্চদশ দিনে (রাতে) চাঁদ পূর্ণ পরিমাণে উদিত হয় বলে ওই তিথিকেপূর্ণিমা' বলা হয়অপরদিকে ষোড়শ দিন থেকে দ্বিতীয় পক্ষ; অর্থাৎ, কৃষ্ণপক্ষ শুরু হয়। ‘কৃষ্ণ' অর্থকালো'। 


ষোড়শ তিথি থেকে চাঁদ ক্ষয় হতে শুরু করে এবং ত্রিংশ তিথিতে গিয়ে একেবারে বিলিন হয়ে যায়ওই তিথিতে রাতের পৃথিবী কালো আঁধারে ছেয়ে যায় বলে এই পক্ষকে কৃষ্ণপক্ষ বলা হয়কৃষ্ণপক্ষের প্রথম তিথি থেকে চতুর্দশ তিথির নাম শুক্লপক্ষের অনুরূপ (প্রতিপদ, দ্বিতীয়া ...... চতুর্দশী) হলেও শেষ তিথির নাম হচ্ছেঅমাবস্যা'। অমা' অর্থসঙ্গে', ‘√বস্' মানেবাস করা'; ‘‘অমাবস্যা' হচ্ছেসঙ্গে বাস করা'পৌরাণিক কাহিনিতে পাওয়া যায়কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চদশ তিথিতে চাঁদ সূর্যের সঙ্গে একত্রে বাস করে বলে পৃথিবীর আকাশে উদিত হয় না, যার ফলে ওই তিথিতে পৃথিবী কালো আঁধারে ছেয়ে যায়এবং এই কারণেই কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চদশ তিথিকেঅমাবস্যা' বলা হয় 




পক্ষের
তিথিসমূহকে আবার পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়:— ১. নন্দা; ২. ভদ্রা; ৩. জয়া; ৪. রিক্তা; এবং ৫. পূর্ণাপ্রথম তিথির সঙ্গে পাঁচ যোগ করে করে নন্দার তিথিগুলো, দ্বিতীয় তিথির সঙ্গে পাঁচ যোগ করে করে ভদ্রার তিথিগুলো, তৃতীয় তিথির সঙ্গে পাঁচ যোগ করে করে জয়া তিথিগুলো, চতুর্থ তিথির সঙ্গে পাঁচ যোগ করে করে রিক্তা তিথিগুলো এবং পঞ্চম তিথির সঙ্গে পাঁচ যোগ করে করে পূর্ণার তিথিগুলো পাওয়া যায়অর্থাৎ-
 👇


১. নন্দা: প্রতিপদ, ষষ্ঠী (১ + ৫) আর একাদশী (১ + ৫ + ৫) 
২. ভদ্রা: দ্বিতীয়, সপ্তমী (২ + ৫) আর দ্বাদশী (২ + ৫ + ৫) 
৩. জয়া: তৃতীয়া, অষ্টমী আর ত্রয়োদশী 
৪. রিক্তা: চতুর্থী, নবমী আর চতুর্দশী 
৫. পূর্ণা: পঞ্চমী, দশমী, পূর্ণিমাঅমাবস্যা 


শুক্লপক্ষকৃষ্ণপক্ষ এর মধ্যে শুক্লপক্ষ যেমন অমাবস্যা তিথিতে শুরু হয়ে পূর্ণিমা তিথিতে শেষ হয়, ঠিক তেমনি কৃষ্ণপক্ষও পূর্ণিমা তিথিতে শুরু হয়ে বিপরীতক্রমে অমাবস্যা তিথিতে শেষ হয়কৃষ্ণপক্ষের ক্ষেত্রেও ঠিক একইভাবে পূর্ণিমার পরের দিন থেকে প্রতিপদ এবং বাকি তিথিগুলিও শুক্লপক্ষের অনুসারেই পরিগণিত হয়সংস্কৃতকৃষ্ণকথার অর্থ হল কালো বা অন্ধকারপুরাণে কৃষ্ণের গায়ের রঙের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এই পক্ষের নামকরণ করা হয়েছে কৃষ্ণপক্ষ হিসেবেপ্রতিটি পক্ষের অন্তর্গত তিথিগুলিকে বিশেষ বিশেষ নামে ডাকা হয়ে থাকে, যেমনশুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিকে বলা হয় শুক্লা পঞ্চমী, আবার কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিকে বলা হবে কৃষ্ণা চতুর্দশী ইত্যাদি 


🎊চান্দ্র বর্ষপঞ্জিতে শুক্লপক্ষ, কৃষ্ণপক্ষ বা প্রতিটি তিথি হিন্দুদের কাছে উতসব-অনুষ্ঠান পালনের নির্দেশক হিসেবে কাজ করে বেশিহিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শুক্লপক্ষকে পবিত্র বলে মনে করেন 😇ধর্মীয় রীতি-নীতির ক্ষেত্রে প্রতিটি পক্ষের নির্দিষ্ট তিথির বিশেষ তাৎপর্য আছেবিভিন্ন পূজার তিথি নির্ণয় করা হয় এই পক্ষের হিসেব করেইকার্তিক মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে দক্ষিণ ভারতে গোবর্ধন পূজা করা হয়, আবার কার্তিক মাসেই শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইদুজবৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়ার দিনটি "অক্ষয় তৃতীয়া" নামে বাঙালিদের মধ্যে বহুল জনপ্রিয়ভাদ্র মাসের শুক্লা চতুর্থীতে সারা উত্তর ভারত জুড়ে অনুষ্ঠিত হয় গণেশ পূজামাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিটি বিদ্যার্থীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই তিথিতেই সরস্বতী পূজা হয়ে থাকেআশ্বিন মাসে শুক্লপক্ষের পঞ্চমী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন ধরে চলে হিন্দু বাঙালিদের সবথেকে বড়ো পূজা দুর্গাপূজাএভাবেই কৃষ্ণপক্ষেরও কিছু কিছু তিথি ধর্মীয় দিক থেকে খুবই উল্লেখযোগ্যযেমন কার্তিক মাসের কৃষ্ণা চতুর্থীতে অবাঙালিরা পালন করেন করবা চৌথ আবার কার্তিক মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে দক্ষিণ ভারতীয়রা পালন করে থাকেন নরক চতুর্দশী উৎসবশ্রাবণ মাসের কৃষ্ণা অষ্টমী তিথি পালিত হয় জন্মাষ্টমী হিসেবেফলে হিন্দুদের কাছে প্রতি মাসের এই পক্ষ এবং তিথিগুলি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে আনেচান্দ্র বর্ষপঞ্জি কিংবা এই চান্দ্রমাসের হিসেব বহু প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে, আজও তা বহমান 😀




 
শুক্লপক্ষকৃষ্ণপক্ষের দিন সমূহঃ 


শুক্ল পক্ষ 

কৃষ্ণ পক্ষ 

১. প্রতিপদ 

১. প্রতিপদ 

২. দ্বিতীয়া 

২. দ্বিতীয়া 

৩. তৃতীয়া 

৩. তৃতীয়া 

৪. চতুর্থী 

৪. চতুর্থী 

৫. পঞ্চমী 

৫. পঞ্চমী 

৬. ষষ্ঠী 

৬. ষষ্ঠী 

৭. সপ্তমী 

৭. সপ্তমী 

৮. অষ্টমী 

৮. অষ্টমী 

৯. নবমী 

৯. নবমী 

১০. দশমী 

১০. দশমী 

১১. একাদশী 

১১. একাদশী 

১২. দ্বাদশী 

১২. দ্বাদশী 

১৩. ত্রয়োদশী 

১৩. ত্রয়োদশী 

১৪. চতুর্দশী 

১৪. চতুর্দশী 

১৫.পূর্ণিমা 

১৫. অমাবস্যা 

 




  পঞ্জিকা পঞ্জিকা বছরের প্রতিদিনের তারিখ, তিথি, শুভাশুভ ক্ষণ, লগ্ন, যোগ, রাশিফল, বিভিন্ন পর্বদিন ইত্যাদি সংবলিত গ্রন্থ। একে পঞ্জী বা পাঁজিও ...