পঞ্জিকা
বাংলাদেশের পঞ্জিকায় সংস্কারের ফলে নাক্ষত্রিক পঞ্জিকা বাংলা সন এখন থেকে সৌর পঞ্জিকা হয়ে গেছে। কারণ আগে এর বর্ষশুরু নক্ষত্রের অবস্থানের ওপর নির্ভর ছিল, এখন তা সৌর পঞ্জিকা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিন তথা ১৪ এপ্রিল শুরু হবে। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন ৩১ দিনের হবে। কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ ও চৈত্র ৩০ দিনের হবে। ফাল্গুন হবে ২৯ দিনের। আগে আশ্বিন ও ফাল্গুন ছিল ৩০ দিনের। দুই ভাবেই মোট ৩৬৫ দিন। এখনো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যে বছর অধিবর্ষ হবে অর্থাৎ ৩৬৬ দিনে বছর হবে, সে বছর ফাল্গুন মাস ৩০ দিনের হয়ে বাংলা বছরও ৩৬৬ দিনের হবে। এর ফল আমরা পাব ফাল্গুন মাসে। এখন আর ২১ ফেব্রুয়ারি ৯ ফাল্গুন হবে না, ৮ ফাল্গুনই হবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১ ফাল্গুনেই ‘ভালোবাসা দিবস’ হবে। সারা বাংলায় নববর্ষও একই দিন ১৪ এপ্রিল হবে।
ব্রিটিশ রাজত্ব অবসানের পর সারা দেশের জন্য একটি একই রকম পঞ্জিকা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ভারত সরকার ১৯৫২ সালের নভেম্বরে ড. মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। মেঘনাদ সাহা কমিটি সরকারের কাছে সুপারিশ করে যে, (১) প্রচলিত নাক্ষত্রিক পঞ্জিকার (sidereal calendar) পরিবর্তে ক্রান্তীয় পঞ্জিকা (tropical calendar) চালু করা, ২) বছরের শুরু বৈশাখের পরিবর্তে চৈত্র থেকে শুরু করা, ৩) চৈত্র মাস ছয়-সাতদিন দেরিতে শুরু করা এবং ৪) শকাব্দকে জাতীয় পঞ্জিকা ঘোষণা করা হোক।
বর্তমান বাংলা পঞ্জিকা দক্ষিণ এশিয়ায় হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা একটি ফসলি পঞ্জিকা ও নাক্ষত্রিক পঞ্জিকা। এর প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত সময়ে রয়েছে বাংলার তিনটি ফসল মৌসুম, যথা আউশ, আমন ও রবি। বাংলা পঞ্জিকার বছরকে চার মাস ধরে ভাগ করে সহজেই এ ফসল মৌসুমগুলো চিহ্নিত করা যায়। ব্যবসায়ীরা এ পঞ্জিকার প্রথম দিন পহেলা বৈশাখে হালখাতা করে নববর্ষ হিসেবে এবং শেষ দিন ব্যবসায়িক লেনদেনের হিসাব বন্ধ করে ও চৈত্রসংক্রান্তি হিসেবে সারা বাংলায় যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে পালিত হওয়ায় এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। লক্ষণীয়, ফসলি পঞ্জিকার প্রথম দিনে নববর্ষ পালনের ঐতিহ্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ইউনান, মিয়ানমার, মালয়, সুমাত্রা, শ্রীলংকা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্র, কেরালা, ওড়িশা, বিহার, আসামসহ সমগ্র উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল, পাঞ্জাব ও কাশ্মীর প্রভৃতি দেশেও পালিত হয়। এ বিশাল অঞ্চলটি মৌসুমি বায়ু প্রভাবিত বিধায় ধারণা করা যায়, সুদূর অতীত থেকেই এ অঞ্চলে ফসলি পঞ্জিকা বিরাজ করছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন